ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

লজ্জাশীলতা : পূর্ণ ঈমানের জন্যে যা অনিবার্য-২

Daily Inqilab শিব্বীর আহমদ

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

লজ্জা বলতে আমরা সাধারণত মানুষে মানুষে পারস্পরিক লজ্জার কথাই বুঝি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই, কিন্তু নবী মুহাম্মাদ (সা.) আমাদেরকে লজ্জাশীলতার এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিকের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা অবলম্বন করো। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আলহামদু লিল্লাহ, আমরা লজ্জা অবলম্বন করি। নবীজী (সা.) তখন বললেন : আমি তো এটা বলিনি। বরং আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা হবে এমন- তুমি মাথা হেফাযত করবে, মাথা যা কিছু ধারণ করে তাও হেফাযত করবে, পেট হেফাযত করবে, পেট-সংলগ্ন যা কিছু আছে তাও হেফাযত করবে, আর মৃত্যুকে স্মরণ করবে, স্মরণ করবে (মৃত্যু পরবর্তী সময়ে) চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাটিতে মিশে যাওয়াকেও। আর যে পরকাল কামনা করে সে তো দুনিয়ার জৌলুস বর্জন করে। এগুলো যে করতে পারল সে-ই আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা অবলম্বন করল। (জামে তিরমিযী : ২৪৫৮)।

হাদীসের বাণী দ্ব্যর্থহীন, স্পষ্ট। আল্লাহ তাআলার সঙ্গে পূর্ণ লজ্জাশীল আচরণ করতে চাইলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে সব রকম গোনাহের কাজ থেকে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সামনে যেমন মাথা নুইয়ে দেয়া যাবে না, তেমনি রুকু-সিজদা তথা নামায হতে হবে সম্পূর্ণ রিয়া ও লৌকিকতা মুক্ত। পাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে মাথার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জিহ্বা চোখ নাক কানকেও। পেটে যেন কোনো হারাম খাবার না ঢুকে সেদিকে যেমন সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, তেমনি পেট-সংলগ্ন অঙ্গসমূহ যেমন, লজ্জাস্থান, হাত-পা ইত্যাদিকেও হেফাযত করতে হবে সব রকম নিষিদ্ধ কর্মকা- থেকে।

স্মরণ করতে হবে অনিবার্য মৃত্যুকে, মৃত্যুর পর মাটিতে মিশে যাওয়াকে। মৃত্যুর স্মরণ যদি তাজা থাকে, তাহলে মানুষ পাপ ছাড়তে বাধ্য। সর্বশেষ কথা, পরকালীন সফলতা আর দুনিয়ার চাকচিক্য তো একসঙ্গে থাকতে পারে না। কেউ কেউ তো এ দুটো বিষয়কে দুই সতীনের সঙ্গেই তুলনা করেছেন। পরকালে মুক্তি পেতে হলে দুনিয়ার চাকচিক্য ছাড়তে হবে। এভাবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিজের প্রতিটি অঙ্গকে যে পাপমুক্ত রাখতে পারবে, কেবল সে-ই তো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে লজ্জা অবলম্বন করল।

বিষয়টি আমরা ভিন্নভাবেও বুঝতে পারি। মানুষ যখন কোনো অন্যায় করে আর তা কেউ জেনে যায়, তখনই সে লজ্জায় নীল হয়। কেউ যদি কাউকে কোনো প্রকার অনুগ্রহ করে, বিপদে সহযোগিতা করে, সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ায়, আর এ অনুগ্রহকারীর কোনো কথা সে রাখতে না পারে তখনো সে লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্পর্কে তো আমাদের স্থির বিশ্বাস- তিনি সবকিছু দেখেন, শোনেন। ন্যায়-অন্যায় যা-ই আমরা করি না কেন, তাঁর অজানা থাকে না কিছুই।

যা প্রকাশ্য তাও তিনি জানেন, যা কিছু রাতের অন্ধকারে বাড়ির ভেতরের গোপন কক্ষে করা হয় তাও তিনি জানেন। আবার তিনিই তো আরহামুর রাহিমীন- সবচেয়ে বড় অনুগ্রহশীল। দুর্যোগে বিপদে তিনিই আমাদের আশ্রয়। এমন কারও সঙ্গে অবাধ্যতা- তা কি সুস্থ বিবেকের কাজ হতে পারে? তিনি যেহেতু সবকিছুই জানেন, তাই তাঁর সঙ্গে লজ্জা অবলম্বন করতে হলে তো অবশ্যই তাঁর অবাধ্যতা ছাড়তে হবে। কিংবা কোনো পাপে জড়াতে চাইলে এমন কোনো স্থান খুঁজে নিতে হবে, যা তাঁর দৃষ্টির বাইরে। আর এটা যে অসম্ভব- তা কে অস্বীকার করবে?

তবে মনে রাখতে হবে, এ লজ্জাশীলতা যতক্ষণ কাউকে পাপ থেকে বিরত রাখবে, অন্যায়-অপকর্ম-অনৈতিকতা থেকে মুক্ত রাখবে, ততক্ষণই তা কল্যাণকর। লজ্জার কারণে যখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাউকে দান করতে হয়, কিংবা কারও প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হয় তখনো তা কল্যাণকর। কিন্তু এ লজ্জা যদি কারও কল্যাণের পথে, ন্যায়ের পথে, ইলম হাসিলের পথে, সঠিক পদ্ধতিতে আল্লাহ পাকের ইবাদতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তখন আর তা কল্যাণকর নয়। সাহাবায়ে কেরাম তো পবিত্রতা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি নানা বিষয় রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করতেন। তিনিও নিঃসঙ্কোচে উত্তর দিতেন। অথচ হাদীসের ভাষ্য অনুসারে, তিনি ছিলেন অন্তঃপুরিকা কুমারীর চেয়েও অধিক লজ্জাশীল। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪১৮০)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অল্পেতুষ্টি : যেখানে নিহিত প্রকৃত সুখ ও সফলতা-২
অল্পেতুষ্টি : যেখানে নিহিত প্রকৃত সুখ ও সফলতা-১
লজ্জাশীলতা : পূর্ণ ঈমানের জন্যে যা অনিবার্য-১
ইসলাম শান্তির ধর্ম কেন ও কীভাবে-২
ইসলাম শান্তির ধর্ম কেন ও কীভাবে-১
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম